ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ: ইড্রেট ও চর্বির বিপাকে সমস্যার কারণে যকৃতে চর্বি জমে। এ সমস্যাকে বলে ফ্যাটি লিভার। এ থেকে মুক্তি পেতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের বিকল্প নেই। জানাচ্ছেন ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
ফ্যাটি লিভার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে, অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। আমাদের দেশে মদ প্রচলন কম থাকায় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হওয়ার প্রবণতা বেশি। সাধারণত অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, রক্তে অতিমাত্রায় ট্রাইগ্লিসারাইড থাকলে এবং রক্তে ভালো কোলস্টেরল বা এইচডিএলের পরিমাণ হ্রাস পেলে ফ্যাটি লিভার হয়। এ ছাড়া কার্বোহাইড্রেট ও চর্বির বিপাকীয় সমস্যার কারণেও যকৃতে চর্বি জমে। প্রতিটি সুস্থ মানুষের খাবারদাবারে নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। আর ফ্যাটি লিভারের রোগীদের খেতে হবে খুবই মেপে এবং সতর্কতার সঙ্গে। এবার জানাচ্ছি ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় কী খাবের আর কী কী খাওয়া যাবে না সে বিষয়ে।
যা খাবেন
যকৃতের চর্বি কাটাতে কোলিন যুক্ত খাবার, যেমন চীনাবাদাম, ইলিশ, পুঁটি মাছ, চিংড়ি, স্যামন, ফুলকপি, সয়াবিন ও ডিম নিয়মিত খেতে হবে।
প্রতিদিন সবুজ শাক, বিশেষ করে পালংশাক, ব্রোকলি, শালগম ও বাঁধাকপি খাবারের তালিকায় রাখতে হবে।
শর্করার উৎস হিসেবে জটিল আঁশযুক্ত শর্করা বেছে নিন। যেমন ওটস, ব্রাউন রাইস, হোল গ্রেইন আটা ইত্যাদি।
ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার যকৃতের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছ, যেমন টুনা, সার্ডিন, স্যামন, কাঠবাদাম, ওয়ালনাট, ফ্ল্যাক্সসিড ও অলিভ ওয়েল খেতে হবে নিয়মিত।
বিচি-জাতীয় খাবার যেমন শিমের বিচি, সূর্যমুখীর বিচি, কুমড়োর বিচি ও রেড কিডনি বিনসে প্রচুর ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এ উপাদান ফ্যাটি লিভারের জন্য উপকারী।
প্রতিদিন পরিমাণমতো দুগ্ধজাত খাবার, দুধ বা দই খেতে হবে। এতে বিদ্যমান প্রোটিন যকৃৎকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
যা খাবেন না
সহজে হজম হয় এমন শর্করা পুরোপুরি বাদ দিতে পারলে ভালো। প্রথমদিকে অল্প অল্প করে কমাতে থাকুন। কারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত শর্করাই চর্বি হিসেবে যকৃতে জমা হতে থাকে। তাই সাদা ভাত, সাদা আটা বা ময়দা, মিষ্টি বা চিনিযুক্ত খাবার, কোমল পানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, মিষ্টান্ন বা ডেজার্ট ও বেকারির খাবার যথাসম্ভব বাদ দিতে থাকুন।
অ্যালকোহল, তেলে ভাজা খাবার, কাঁচা লবণ, লাল মাংস (গরু-খাসির মাংস) এড়িয়ে চলতে হবে।
লিভারের রোগীদের সংক্রমণজনিত রোগ ফুসফুসের মারাত্মক সংক্রমণ, নিউমোনিয়া ও রেসপিরেটরি ফেইলিওর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ভাইরাস লিভারের সরু রক্তনালি ও পিত্তনালিকেও আক্রান্ত করে। কখনো কখনো কভিডের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্যও লিভার আক্রান্ত হতে পারে।
আক্রান্তদের ১৪ থেকে ৪৫ ভাগের লিভারের ক্ষতি হতে পারে। তখন লিভারের এসটি, এএলটি ও বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। লিভার থেকে প্রস্তুত সিরোসিস শুনলেই যেন মনে আসে আরেকটি ভয়াবহ রোগের নাম লিভার ক্যান্সার। সিরোসিস আর ক্যান্সার সাধারণ মানুষের কাছে একে অপরের সমার্থক। আসলে ব্যাপারটি কিন্তু ঠিক তা নয়। রোগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকে লিভার সিরোসিসকে লিভার ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।